অরূপ রায়, বর্ধমান
সকালে প্রবল কোলাহলের মধ্যে যখন চেতনা এল, চারদিক অন্ধকার। একটি নির্মাণ সংস্থার কর্মী আমি। বাড়ি বর্ধমানে। ওই সংস্থার কাজেই অসমের বদরপুরে গিয়েছিলাম। রবিবার কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ধরি ফেরার জন্য। হাতে-পায়ে যন্ত্রণা শুরু হতেই তাকিয়ে দেখি, শক্ত মেঝেতে পড়ে আছি।ট্রেনের সিট ছেড়ে কেন এখানে?
কিছুই মনে করতে পারছি না তখন। চোখটা সয়ে এলে বুঝলাম, কামরায় মেঝেতে আমি শুয়ে আছি। কেবল আমি নয়, আমার মতো আরও কয়েকজনেরও একই অবস্থা। সকলেই কাতরাচ্ছে। বুঝতেই পারছিলাম না বেঁচে রয়েছি কি না। এর পরে ককর্শ শব্দ পেয়ে বুঝলাম বাইরে থেকে কেউ কামরা কেটে আমাদের বার করার চেষ্টা করছে। এ বার ভরসা হলো।

একটু পরেই দেখি, কয়েকজন লোক, মাথায় টুপি, আমাদের টেনে বার করছে। আমার পা কেটে গিয়েছিল। ওই কর্মীরাই ট্রেন থেকে আমায় নামিয়ে ডাক্তারদের কাছে নিয়ে গেলো। আমার পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হলো। কিন্তু আমি কী করব বুঝতে পারছিলাম না। জামাকাপড়ের ব্যাগ সঙ্গে আছে। টাকা ও বাড়ির জন্য কেনা জিনিসপত্রের ব্যাগ, মোবাইল, সবই তো কামরার ভিতরে।

Kanchanjungha Express Accident : দোয়া শেষে জান কুরবান প্রাণরক্ষায়, পড়ে রইল কুরবানির মাংস

অনেকক্ষণ কামরার সামনে রেললাইনে পাথরের উপরে বসে ব্যস্ত লোকেদের দৌড়াদৌড়ি দেখছি। একজন এসে বলল, ‘খুব বেঁচে গিয়েছেন। বাড়ি চলে যান।’ বাড়ি কী করে যাব? ব্যাগেই তো আমার সব টাকাপয়সা। দু’মাসের ইনকাম। বাড়ির লোক কী খাবে? মোবাইল ছাড়া তো যোগাযোগই করতে পারব না।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য এক পুলিশ অফিসার এসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিলেন। ওখানেই মোবাইল এবং ব্যাগ পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে আমাকে আশ্বাস দিলেন। তাঁর ভরসাতেই কামরার সামনে থেকে উঠে এলাম। জানি না শেষ পর্যন্ত ব্যাগ-মোবাইল ফেরত পাব কি না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version