দিব্যেন্দু সরকার: হাউ হাউ করে কাঁদছেন প্রধান শিক্ষিকা—“স্কুল যেন ফাঁকা হয়ে না যায়!” হাতজোড় করে কাতর অনুরোধ করছেন এক মা—“বাচ্চাগুলো যেন পড়াশোনা ছেড়ে না দেয়।” অথচ বাস্তব বড় কঠিন। নদীর ওপারে থাকা ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীরা আজ স্কুলমুখো নয়, বরং ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য স্কুলে চলে যাওয়ার অপেক্ষায়। টানা এক মাস স্কুল মুখো হয়নি শিশুরা।
খানাকুলের সেকেন্দার পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অবস্থিত কানা মুণ্ডেশ্বরী নদীর তীরে। প্রতিদিন নদী পার হয়ে প্রায় ৫০-৬০ জন শিশু ওই বিদ্যালয়ে পড়তে আসত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এলাকার একমাত্র অস্থায়ী সেতুটি বেশ কিছুদিন আগে ভেঙে যায়। ফলে বৃষ্টিতে নদী ভরে উঠলেই বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াত। তাই প্রায় এক মাস হয়ে গেল, ওই পড়ুয়ারা বাড়িতেই। বইয়ের বদলে হাতে খেলার সরঞ্জাম, শ্রেণিকক্ষের বদলে বাড়ির উঠোনে সময় কাটছে তাদের।
পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে তারা। মিড ডে মিলের রান্না হলেও শিশুরা খেতেই পারছে না। আবার শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এরা। যা নিয়ে প্রবল উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। হতাশ অভিভাবিকাদের মধ্যে মৌসুমি বেরা, কাকলি বেরা, মৌমিতা বেরা-সহ একাধিকজন বলেন, “আমরা তো অনেকবার বলেছি, অন্তত একটা অস্থায়ী সেতু কিম্বা একটা নৌকা যেন দেয় প্রশাসন। কিন্তু কেউ কোন কথা শোনেনি। পঞ্চায়েতের কর্তারাও উদাসীন।
‘এখন তো পড়াশোনা বন্ধ, তাই বাধ্য হয়ে টিসি নিয়ে অন্য স্কুলে ভর্তি করার কথা ভাবছি।’ তারা কাতর স্বরে আবেদন করে বলেছেন, ‘আমরা করজোরে মিনতি করে বলছি, একটা কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হোক। অন্তত একটা নৌকা দেওয়া হলে পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারে। কারণ সেতু তৈরি করতেও সময় লাগবে। তাই আপাতত একটা নৌকা হলে স্কুলে যেতে পারবে আমাদের সন্তানরা। তা নাহলে আমাদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে অন্যত্রে চলে যেতে হবে।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা চম্পা মন্ডল হাজরার গলা ধরে আসে— ‘১৬৪ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রায় ৫০-৬০ জন এখন স্কুলে আসতে পারছে না। মিড ডে মিল পাচ্ছে না, লেখাপড়ার ধারাবাহিকতা ভেঙে যাচ্ছে। আমি তো রোজ ওদের মুখ না দেখলে থাকতেই পারি না। এইভাবে কতদিন চলবে?’ বলতে বলতে তিনি হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন। অভিভাবক, শিক্ষক, সকলেই একবাক্যে বলছেন—এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে যদি একটি অস্থায়ী সেতু বা অন্তত একটি নৌকার ব্যবস্থা না হয়, তাহলে এলাকার শিশুরা শিক্ষার আলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
তাই সবার একটাই আবেদন—নদী পেরিয়ে পড়ুয়াদের স্কুলে ফেরাতে প্রশাসন যেন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে। অন্তত একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা হলেই আবার স্কুল চত্বরে ফিরে আসবে সেই প্রাণচাঞ্চল্য, ফিরে আসবে শিক্ষার স্বাভাবিক ছন্দ। স্কুলের খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে ছাত্র রূপম বেরা ও সুদীপ্ত বেরা, ছাত্রী অদৃতা বেরারা বলেছে, এখন বাড়িতে থাকি। স্কুলে যাই না। নদীতে জল। তাই কি করে যাবো। একটা নৌকা বা সেতু করে দিলে আমরা স্কুলে যেতে পারব। আমরা বাড়িতেই থাকি। পড়াশোনা করি। খেলা ধুলাও করি।
স্থানীয় রাম মোহন ২ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান সুজিত ঘোষ বলেন, আমি এসেছি। জানতাম না। দেখছি একটা কিছু তো ব্যবস্থা করে দিতেই হবে। আবার পঞ্চায়েতের শিক্ষা সঞ্চালক তাপসী ঘোষ বলেন, আমিও চিন্তিত। শিশুগুলো পড়তে যেতে স্কুলেই যেতে পারছে না। খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করার আবেদন করব ব্লকে।
আরও পড়ুন, Elephant Death: দুই শাবক-সহ তিন হাতির মৃত্যু! দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় ছিটকে পড়ল ১০০ মিটার দূরে…
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)