পিয়ালি মিত্র: আলিপুরে বাড়ির আলমারি থেকে ছাত্রীর দেহ উদ্ধারের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মৃতার বাবা ভোলা সিংহ এবং সৎমা পূজা রায়কে থানায় নিয়ে গেল পুলিস। পুলিস সূত্রে খবর, আলমারিতে একটি হ্যাঙ্গারে আংশিক ভাবে (পার্শিয়ালি হ্যাঙ্গিং) ঝুলছিল তার দেহটি।
পারিবারিক এই জটিল সম্পর্কের মধ্যেই এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটায়, রহস্য আরও ঘনীভূত হয়েছে।
ঘটনার রাতে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা বাড়িতেই ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে কেউ কী ভাবে বা কখন কিশোরীকে ওই অবস্থায় দেখতে পান, তা নিয়েও চলছে প্রশ্ন। পরিবারের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি, তবে পুলিস নিজ উদ্যোগে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করেছে।
গলায় ফাঁসের চিহ্ন সহ প্রমাণ দেখে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশীদের দাবি, বাবা ও সৎ মা মিলে খুন করেছে ওই নাবালিকাকে। নাবালিকার ঠাকুমা বলেন, “মাত্র ১১ বছর বয়স। কীভাবে গলায় ফাঁস দেবে!” তিনি আরও বলেন, তাঁর ঘরে যাওয়ার অনুমতিও ছিল না তাঁর নাতনির। তাঁর ঘরে এখনও সাজানো রয়েছে সব খেলনা। কিন্তু বারণ থাকায় যেতে পারত না ওই নাবালিকা।
আলিপুর থানার এক পুলিস আধিকারিক জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে কিছু নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এবং ফরেন্সিক বিশ্লেষণ পাওয়ার পরই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্য দিকে, বছর দশেকের সঞ্জনা সিংহের দেহের ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টও হাতে পেয়েছে পুলিস। তাতে আত্মহত্যার আভাস মিলেছে। তাঁর ঠাকুমার দাবি, নাতনির গলায় জড়ানো ছিল একটি গোলাপি ওড়না।
এদিকে এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকস্তব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই দাবি করেছেন, কিশোরীটি অত্যন্ত শান্ত এবং হাসিখুশি প্রকৃতির ছিল। তাই আত্মহত্যার তত্ত্বে তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না। পুরো ঘটনায় রহস্য আরও গভীর হচ্ছে, আর সেই রহস্যের জট খুলতেই এখন তদন্তে জোর দিচ্ছে পুলিস।
প্রসঙ্গত, আরজিকরকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সঞ্জয় রায়ের বাড়িতে আজ সকালে ভয়ংকর ঘটনা। বাড়ির আলমারির ভিতর থেকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার সঞ্জয় রায়ের ১১ বছরের ভাগ্নি। আলমারির মধ্যে থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ওই নাবালিকাকে। জানা গিয়েছে, ওই নাবালিকা আরজি করের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী সঞ্জয় রায়ের বড় দিদির মেয়ে।
রবিবার রাতে অচৈতন্য অবস্থায় আলমারির মধ্যে থেকে ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে পরিবার। ঘরেরই আলমারির মধ্য়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় অচেচন পড়েছিল ওই কিশোরী। তবে তখনও দেহে প্রাণ ছিল। তড়িঘড়ি ওই কিশোরীকে এসএসকেএস হাসপাতালে নিয়ে যায় পরিবার। সোমবার কালীপুজোর দিনই মৃত্যু হয় ওই কিশোরীর। ওই কিশোরীকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। এখন এই ঘটনা কি নিছকই আত্মহত্যা নাকি এই মৃত্যুর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? কিশোরীর রহস্যমৃত্যুতে উঠেছে হাজারো প্রশ্ন।
ঘটনাটি ঘটেছে আলিপুর থানার অন্তর্গত বিদ্যাসাগর কলোনিতে। নাবালিকার ঠাকুমার অভিযোগ, ‘ওরা আলাদা থাকত, আমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিত না। আমি নাতনির ব্যাপারে কিছু জানতে পারতাম না। এক মাস আগে যাঁর ১১ বছর বয়স হল, সে কি গলায় দড়ি দিতে পারে? মাত্র ১১ বছরের একটা মেয়ে গলায় দড়ি দিতে পারে? এটা কি সম্ভব? ওর মা, মানে আমার ছেলের আগের স্ত্রী-ও আত্মঘাতী হয়েছিল। তারপর ছেলে ওর মায়ের ছোট বোন, মানে মাসিকে বিয়ে করে।’
ঠাকুমার অভিযোগ, দ্বিতীয় বিয়ের পর থেকেই বদলে যায় ছবিটা। নাতনিকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দিতেন না। তাঁর থেকে দূরে দূরে রাখতেন। ঠাকুমা বলেন, ‘আমায় বাড়িতে ঢুকতে দিত না। মেয়েটা আসতে চাইত, কিন্তু সব সময় দূরে দূরে রাখত। কিছুতেই কাছে আসতে দিত না। আমরাও দূরত্ব বজায় রেখেই কথা বলতাম।’ প্রসঙ্গত, আরজি করের ঘটনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী সঞ্জয় রায়ের ভাগ্নি ওই কিশোরী। তার বড় দিদির মেয়ে।
এখন মায়ের মৃত্যুর পর থেকেই সঞ্জয়ের ছোট দিদি-ই মেয়ের দেখাশোনা করতেন। পরবর্তীতে মাসিকেই বিয়ে করেন ওই কিশোরীর বাবা, সঞ্জয়ের জামাইবাবু। ফলে মৃত্যুর কারণ কী? তা নিয়ে ধোঁয়াশা। দানা বাঁধছে রহস্য। আত্মহত্যা নাকি অন্য খুন? তদন্ত শুরু করেছে পুলিস। তদন্তে নেমে সবদিকই খতিয়ে দেখছে পুলিস। ইতিমধ্যেই কিশোরীর দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্টের হাতে পেলেই, তার ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।