কিছু অটো ও টোটো চলাচল করেছে রাস্তায়। তবে বনধের জেরে কোনও দোকান পাটের ঝাঁপ খোলেনি এদিন। রায়গঞ্জের শহরের বিভিন্ন এলাকায় ছিল একই ছবি৷ বনধের দিন বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ রায়গঞ্জের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে চড়াও হয় বনধ সমর্থকরা। রায়গঞ্জের বকুলতলায় অবস্থিত বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কে হানা দেন তাঁরা।
সটান ব্যাঙ্কে ঢুকে প্রশ্ন করেন, বনধের ডাক সত্ত্বেও কেন খোলা ব্যাঙ্কের গেট? এই নিয়ে পালটা ব্যাঙ্ক কর্মীদের সঙ্গে বচসাও হয় বনধ সমর্থকদের। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রায়গঞ্জ থানার পুলিশ। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এরপরেই ব্যাঙ্কের গেট বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ৷ ব্যাঙ্কের পর রায়গঞ্জের ডিভিশনাল পোস্ট অফিসেও হানা দেয় বনধ সমর্থকেরা।
সেখানেই কর্মীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় জড়ান বনধ সমর্থকরা। এরপরেই পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষও গণ্ডগোলের আশঙ্কায় ডাক ঘরের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেন৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় আধার কার্ড তৈরির অফিস রুমও। পাশাপাশি রায়গঞ্জ শহরে কার্যত রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ান বন্ধ সমর্থকেরা। চলাচলকারী টোটো থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন তাঁরা।
চলাচলকারী টোটোর চাকার হাওয়া বের করে দেন বিক্ষোভকারীরা। এমনকি যে সমস্ত দোকান কিংবা শপিং মল খোলা ছিল সেগুলো গিয়ে বন্ধ করিয়ে দেন বনধ সমর্থকরা। এই বিষয়ে সংগঠনের নেতা নেপোলিয়ন হেমব্রম বলেন, “বনধের ঘোষিত কারণ একদিকে এসটি তালিকায় জোরজবরদস্তি অন্তর্ভুক্ত হতে চাইছে কুড়মি মাহাতোরা।
অপরদিকে রাজ্য সরকার CRI রিপোর্ট আটকে দিয়েছে। কুড়মি মাহাতোদের স্বার্থে এমনটা হতে পারে বলে সন্দীহান আদিবাসীরা”। এই বনধের জেরে সাধারন মানুষের দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে নেন নেপোলিয়ন বাবু। পাশাপাশি নিজেদের অধিকার ও দাবি আদায়ে এই বনধ আবশ্যক ছিল বলে দাবি তাঁর।
রায়গঞ্জের পাশাপাশি হেমতাবাদে আদিবাসীদের ডাকা বনধ ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বনধের সমর্থনে হেমতাবাদে পথে নামেন আদিবাসী সংগঠনের সদস্যরা। তাঁরা সাধারন মানুষের কাছে শান্তিপূর্নভাবে বনধ পালনের জন্য আবেদন জানান। পরে রাস্তা অবরোধ করে চলে পিকেটিং। যদিও এদিন বনধ উপেক্ষা করেই কিছু ব্যবসায়ী দোকানপাট খুলে দেন।
রাস্তাতেও যাত্রীবাহী কিছু ছোট গাড়ি নামতে দেখা যায়। যাকে ঘিরে শুরু হয় উত্তেজনা। আদিবাসীরা সেখানে এসে আন্দোলনমুখী হয়ে ওঠেন৷ তীরধনুক, বাঁশ হাতে ছুটে আসেন তাঁরা। জোরপূর্বক তাঁরা দোকানপাট বন্ধ করে দেন। গাড়িও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা রুখতে সেখানে উপস্থিত ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী।
হেমতাবাদের পাশাপাশি ইটাহারের চৌরাস্তা মোড়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করে বেশ কয়েকটি আদিবাসী সংগঠনের নেতা কর্মীরা। বাজার ঘাট, দোকান পাট বন্ধ ছিল সকাল থেকেই। রাস্তায় ছিল না কোনও যাত্রীবাহী যানবাহন। এদিনের পথ অবরোধের জেরে ৩৪ নং জাতীয় সড়কের উপরে বহু দুর পাল্লার গাড়ি আটকে পড়ে।
সকাল থেকে ঘটনাস্থলে দেখা যায় ইটাহার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। রায়গঞ্জ, হেমতাবাদ ও ইটাহারের পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জেও পথ অবরোধে নামে আদিবাসী সংগঠনগুলি। কালিয়াগঞ্জ শহরের বিবেকান্দ মোড়ে রায়গঞ্জ-বালুরঘাট রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় বনধ সমর্থকেরা। অন্যদিকে ডালখোলাতেও বনধের সমর্থনে পথে নামে বনধ সমর্থকেরা। ডালখোলার পাতনৌর এলাকার ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান বনধ সমর্থকরা।