এই সময়: পুর নিয়োগ দুর্নীতিতে এবার কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে বিভিন্ন পুরসভার চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানরাও! এই মামলায় ধৃত ব্যবসায়ী অয়ন শীলের সঙ্গে বিভিন্ন পুরসভার পদাধিকারীদের যোগসাজশ, ইডির তদন্তে সামনে এসেছে। তদন্তকারী সংস্থা সূত্রের খবর, এই দুর্নীতির মামলায় বিভিন্ন পুরকর্তাদের নিয়ে অয়নের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের হদিশ পাওয়া গিয়েছে।

সেখান থেকে জানা গিয়েছে, কোন পুরসভায় কাদের নিয়োগ করা হবে, সেই সব চাকরিপ্রার্থীদের বিষয়ে নিয়মিত তথ্য আদানপ্রদান হতো। ওই চ্যাট থেকেই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, পুরকর্তাদের হাতযশে তাঁদের ঘনিষ্ঠরা চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতেন। সেই সূত্র ধরেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার র‍্যাডারে এসেছেন দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই দত্ত।

অভিযোগ, এই মামলার তদন্তে নেমে তাঁর বাড়ি থেকে ৭ পাতার নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। সেই গুরুত্বপূর্ণ নথি থেকে জানা যায়, নিজের প্রভাব খাটিয়ে তিনি পাশের কামারহাটি পুরসভায় চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন স্ত্রী ও ভাইকে। যদিও এবিষয়ে জানতে তাঁকে ফোন করা হলেও নিতাই দত্ত ফোন ধরেননি। জবাব দেননি এসএমএসেরও।

কেন্দ্রীয় সংস্থা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, শুধু এই একটি ক্ষেত্রে নয়, উত্তর চব্বিশ পরগণার আরও কয়েকটি পুরসভাতেও একই ধরনের দুর্নীতি হয়েছে। পুরো বিষয়টি জানিয়ে ইতিমধ্যে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দপ্তর থেকে একটি তদন্ত রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দিল্লিতে। তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, কবে থেকে, কী ভাবে, এই ধরনের নিয়োগ দুর্নীতি হয়েছে তার বিস্তারিত তথ্য।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় সংস্থার লিগাল সেলের কাছ থেকে সবুজ সঙ্কেত এলেই এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে রিপোর্ট পেশ করে ইডি দাবি করেছিল, পুর-দুর্নীতিতে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। পরে তদন্তের অগ্রগতিতে দেখা যায় এই অঙ্ক আরও অনেকটা বেশি।

ইডির দাবি, পুর-দুর্নীতির এই চক্রের মূলে রয়েছেন ব্যবসায়ী অয়ন শীল। তাঁকে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় গ্রেপ্তারের পরে জানা যায় তিনি বিভিন্ন পুরসভার নিয়োগের বিষয়েও জড়িত। তাঁর সংস্থা এবিএস ইনফোজেন প্রাইভেট লিমিটেড ওএমআর শিট মূল্যায়নের দায়িত্বে নেওয়ার পরে কারচুপিতে যুক্ত হয়ে পড়ে।

গোয়েন্দাদের দাবি, দক্ষিণ দমদম পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের বিষয়ে তাদের হাতে যথেষ্ট নথি রয়েছে। এই ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের ঘনিষ্ঠরা প্রভাব খাটিয়েছেন। চাকরির বিনিময়ে টাকার লেনদেনও হয়েছে। ইডি অভিযোগ, চাকরির ক্ষেত্রে গ্রুপ-সি এবং টাইপিস্টের দর সব থেকে বেশি ছিল।

কাদের নিয়োগ, লিস্ট শেয়ার হতো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে!
সে জন্য চাকরিপ্রার্থীদের দিতে হতো ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া লেবার, ড্রাইভার, সাফাই কর্মী পদে দিতে ৪ লাখ টাকা। পুরো বিষয়টির তদন্তে নেমে দমদম, দক্ষিণ দমদম, উত্তর দমদম, বরানগর, হালিশহর এবং কামারহাটি পুরসভার ক্ষেত্রে বেনিয়মের সন্ধান মিলেছে। ইডি সূত্রে খবর, গত কয়েক বছরে রাজ্যের ৬০টি পুরসভায় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি বেআইনি নিয়োগ হয়েছে। আর এই তালিকার শীর্ষে আপাতত রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version