পাতে কুমড়ো ফুলের বড়া পেলেই মহা খুশি – buddhadeb bhattacharya had very favorite food is pumpkin flower bora


ফুলের খোঁজ, তবে কুমড়ো ফুল। জেলা সফরে গেলে বহু সময়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য খোঁজ নিতেন সেখানে কুমড়ো ফুল পাওয়া যায় কি না। গ্রামবাংলায় অবশ্য এমন কোনও জেলা নেই, যেখানে কুমড়ো ফুল মেলে না। খোঁজ করার কারণটা হলো কুমড়ো ফুলের বড়া খাওয়ার শখ। প্রথম পাতে ডাল দিয়ে ভাত মেখে, বেসন বা চালোর গুঁড়ো ও কালো জিরে দিয়ে বানানো কুমড়ো ফুলের বড়া ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর অতি প্রিয় একটি পদ।সাহেবিয়ানা নয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পছন্দর মেনুতে নিখাদ মধ্যবিত্ত বাঙালিয়ানার সুবাস পাওয়া যেত। চিনা, কন্টিনেন্টাল, মোগলাই বা পাঞ্জাবি খানার দিকে তাঁর তেমন আকর্ষণ আদৌ ছিল না। কুমড়ো ফুল, শীতকালে বক ফুলের বড়া, মাছের মাথা দিয়ে ডাল, একটা তরকারি আর মাছের ঝোল— এই সাদামাঠা, ছিমছাম বাঙালি মেনুতেই দিলখুশ হতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

মাটন কিংবা মুরগির চেয়ে মাছের প্রতিই ছিল তাঁর চিরকালীন টান। কালো জিরে-ধনেপাতা-টোম্যাটো কুচি দিয়ে ট্যাংরা মাছ অথবা সর্ষে দিয়ে পাবদা বা কই মাছের ঝোল— এ রকম সীমিত কিছু পদই বুদ্ধদেব তৃপ্তি করে খেতেন। সতীর্থ বুদ্ধদেবের ইলিশ মাছ খাওয়া নিয়ে সুভাষ চক্রবর্তী জমিয়ে একটি গল্প বলতেন। সেটা নয়ের দশকের শেষ দিক।

সুভাষকে তাঁর পরিচিত একজন খাস পদ্মার কয়েকটি ইলিশ পাঠিয়েছিলেন। তারই একটি বুদ্ধদেবকে দিয়ে আসেন সুভাষ। কয়েক দিন পর বুদ্ধদেবের সঙ্গে দেখা হতেই সুভাষ জানতে চান, ইলিশটা কেমন ছিল? বুদ্ধদেব বলেন, ‘খুব ভালো ছিল। কাল কালো জিরে দিয়ে খেলাম।’ কয়েক দিন পর ফের দু’জনের দেখা।

সে দিন সুভাষকে বুদ্ধদেব বললেন, ‘আজ সর্ষে দিয়ে ইলিশ হলো।’ তখন সুভাষ অবাক হয়ে তাঁর চিরাচরিত বাঙাল বুলিতে জিজ্ঞেস করেন, ‘অতটুকু ইলিশডা ক’দিন ধইরা খাইছস?’ বুদ্ধদেব শুধু হেসেছিলেন, কিছু বলেননি। আসলে পঞ্চব্যঞ্জন বা একসঙ্গে চার-পাঁচ পিস মাছ খাওয়ার লোক ছিলেন না বুদ্ধদেব। মন্ত্রী হলে কী! আর পাঁচ জন সাধারণ মধ্যবিত্ত বাঙালির মতোই সুভাষের দেওয়া পদ্মার একটা ইলিশ তিনি অল্প অল্প করে তারিয়ে তারিয়ে খেয়েছিলেন।

কলকাতায় থাকলে কাজের দিনে দুপুরে খেতে কিছুক্ষণের জন্য বাড়ি যেতেন বুদ্ধদেব। মাছের ঝোল-ভাত অথবা ডিমের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে আবার মহাকরণে ফিরতেন। তবে ডিমের ক্ষেত্রে বুদ্ধদেবের খুবই প্রিয় ছিল হাঁসের ডিমের ঝোল। এই একটি পদের প্রতি তাঁর বাড়তি আকর্ষণ ছিল। তাই একটি নয়, পাতে হাঁসের দু’টি ডিম একসঙ্গে পেলে তিনি ভারী খুশি হতেন।

বাড়ি থেকে মহাকরণে টিফিন নিয়ে যেতে বুদ্ধদেবকে সে ভাবে কখনও দেখা যায়নি। মহাকরণ লাগোয়া একটি দোকান থেকে ঘুগনি-পাউরুটি এনে টিফিন সারতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বুদ্ধদেবের গাড়ির চালক ওসমান নিজেই কখনও কখনও সেই খাবার কিনে এনে দিতেন।

মূলত নিখাদ বাঙালিয়ানার বৃত্তে নিজের খাওয়াদাওয়া সীমিত রাখলেও এর বাইরে কাবাবের প্রতি প্রবল টান ছিল বুদ্ধদেবের। পুরোনো দিল্লির জামা মসজিদের কাছে একটি মোগলাই রেস্তোরাঁর কাবাব ছিল তাঁর খুবই পছন্দের। কখনও কখনও জামা মসজিদের পাশের ওই রেস্তোরাঁ থেকে কাবাব আনাতেন। তার পর বঙ্গ ভবনে হাত রুটি ও কাবাব দিয়ে নৈশভোজ সারতেন।

আবার কলকাতার নিউ মার্কেটের কাছে একটি পুরোনো মোগলাই খানার দোকানের কাবাবও বুদ্ধদেব পছন্দ করতেন। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কখনও ভোজনরসিক বলা যাবে না। তবে এ ক্ষেত্রে আগাগোড়া রুচির পরিপাটি ছাপ ছিল তাঁর মধ্যে। এমনিতে দিনে কয়েক কাপ লিকার চা, কালো কফি আর সিগারেট।

অসুস্থ হওয়ার আগে বিলাসিতা বলতে ছিল ওই একটাই— ব্র্যান্ডেড সিগারেট খাওয়া। দীর্ঘদিন চেন স্মোকার ছিলেন। এমনকী সিওপিডি ধরা পড়ার পরেও বহু বছর তিনি সিগারেট ছাড়তে পারেননি। তবে সেই সময়ে সিগারেট খাওয়া কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী, তখন কলকাতায় থাকলে কাজের দিন রোজ সন্ধ্যায় মহাকরণ থেকে আলিমুদ্দিন অফিসে যেতেন। সেখানে দলীয় বৈঠক ও অন্যান্য কাজকর্মের ফাঁকে লিকার চা আর মুড়ি কিংবা টোস্ট— এই ছিল তাঁর টিফিন।

বিজেপি সম্পর্কে একেবারে ঠিক ছিল ওঁর বিশ্লেষণ

অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি হয়ে পড়ার পর চিকিৎসকদের পরামর্শে খাওয়াদাওয়া আরও সীমিত হয়ে গিয়েছিল। বাড়িতে নাকে অক্সিজেন নল নিয়ে থাকতে হতো তাঁকে। প্রবল শ্বাসকষ্টর সমস্যার কারণে জীবনের শেষ কয়েক বছর সিগারেট খাওয়া পুরোপুরি ছেড়ে দেন। তবে একটা জিনিস তার পরেও ছাড়তে পারেননি।

অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিক খাওয়াদাওয়ায় ছেদ পড়লেও মাঝেমধ্যে পাম অ্যাভিনিউয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর আবাসনের কাছাকাছি বাজারে কুমড়ো ফুলের দেখা মিললে তাঁর ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হতো। অসুস্থতার মধ্যেও পাতে কুমড়ো ফুলের কয়েকটি বড়া পেলে বড় খুশি হতেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version