ডব্লিউবি ০১এ ই৫০২১। যে বাইকের সামনে এবং পিছনে লেখা রয়েছে ‘কেপি’ অর্থাৎ কলকাতা পুলিশ। ২০১৪ সালে সেই বাইকটি রেজিস্টার করা হয়েছিল পুলিশ কমিশনারের নামে। আপাতত ওই দ্বি-চক্রযান সিবিআইয়ের কব্জায় থাকলেও তা অস্বস্তি বাড়িয়েছে কলকাতা পুলিশের। কারণ, গত ৯ অগস্ট আরজি করে ওই বাইকে চেপেই ঢুকেছিল মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়।হাসপাতাল চত্বরে পুলিশ লেখা বাইক স্ট্যান্ড করে গটগট করে চারতলায় উঠে গিয়েছিল সে। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে সেমিনার রুমে নৃশংস ঘটনা ঘটানোর পরে ফের সেখান থেকে বেরিয়ে বাইক নিয়ে সোজা পৌঁছে যায় চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে। তারও আগে শ্যামবাজার, সোনাগাছি তারপর চেতলাতেও আরও এক সিভিক ভলান্টিয়ারকে পিছনে বসিয়ে মদ্যপ অবস্থায় মধ্য রাতে কলকাতার রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায় সে।

আরজি করে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মামলা দায়ের করে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। সঞ্জয়কে নিজেদের হেফাজতেও নিয়েছে তারা। কিন্তু ওই একটি বাইকের সূত্রে কলকাতা পুলিশের কয়েকজন অফিসারের ভূমিকাও এ বার চলে এসেছে কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে।

বাইক ঘিরে প্রশ্ন
সিবিআইয়ের এক কর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের কোনও কর্মী নিজের কেনা বাইকে উর্ধ্বতন কর্তাদের অনুমতি নিয়ে ‘কেপি’ স্টিকার লাগাতে পারেন। তবে সেই বাইকে চেপে কোনও দুষ্কর্ম যাতে না হয়, তাও নজর রাখার দায়িত্ব পুলিশের-ই। এমনিতে সরকারি কাজে কলকাতা পুলিশের ট্র্যাফিক গার্ড কিংবা থানার সার্জেন্ট বাইক পেতে পারেন। এ ছাড়া, পেট্রল ডিউটি যাঁরা করেন অথবা থানার অফিসারেরাও কাজের প্রয়োজনে কলকাতা পুলিশের নামে রেজিস্টার করা বাইকে চড়তে পারেন।

কিন্তু সবক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ডিপার্টমেন্টে তা জানানোই দস্তুর। লালবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সিভিক ভলান্টিয়ার কাজের জন্য পুলিশের বাইক ব্যবহার করতে পারেন না। যদি কখনও খুব প্রয়োজন হয় তবে কাজ শেষ হলে তা নির্দিষ্ট থানায় জমা করার পরে বাড়ি ফেরার কথা। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, এ ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশের তৈরি নিয়ম-ই মানেনি সঞ্জয়। শুধু সেই রাতে নয়, এর আগে বিভিন্ন সময়ে ওই বাইকে চেপে শহরময় দাদাগিরি করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

দ্বিতীয় আরও একটি যুক্তি থেকে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা সন্দেহজনক ঠেকেছে সিবিআইয়ের। ওই কর্তার বক্তব্য, ‘আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর রাত পর্যন্ত নাকা চেকিং করেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। সেখানে বাইক এবং গাড়ি থামিয়ে ব্রেথ অ্যানালাইজ়ার দিয়ে চেকিং করা হয়। তা হলে কি পুলিশ লেখা থাকায় ওই বাইকের আরোহীদের চেকিং করা হলো না?

এমনও তো হতে পারে, কোনও জঙ্গি সংগঠন যে কোনও দিন এই সুযোগের সদ্‌ব্যবহার করতে পারে। তা ছাড়া কোনও অল্প দূরত্বে নয়, সঞ্জয় এবং সৌরভ সেই রাতে সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার রাস্তা মদ্যপ অবস্থায় যাতায়াত করেছে। কোথাও একবারের জন্যও তাদের আটকানো হলো না? এই সব প্রশ্নের উত্তরও খুঁজছি আমরা।’ তদন্তকারী সংস্থার যুক্তি, বাইকটি পুলিশের হওয়ায় তার অ্যাডভান্টেজ পেয়েছে অভিযুক্ত।

তবে বাইকটি যে লালবাজারের-ই তা এ দিন স্বীকার করে নিয়েছে কলকাতা পুলিশ। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে পুলিশ জানিয়ে দিয়েছে, ‘কলকাতা পুলিশের বিভিন্ন বিভাগ যে সমস্ত সরকারি যান ব্যবহার করে তা কমিশনারের নামেই সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করা হয়। সঞ্জয় রায় যে মোটরবাইক ব্যবহার করত, সেটি বাজেয়াপ্ত করে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।’

অনুপ দত্তর পলিগ্রাফ
আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ঘনিষ্ঠ এএসআই অনুপ দত্তের পলিগ্রাফ টেস্ট করাতে চায় সিবিআই। কলকাতা পুলিশের ওই কর্মীর পলিগ্রাফ টেস্টের আর্জি মঙ্গলবার শিয়ালদহ আদালতে জানানো হয়েছে। যার অনুমোদনও পাওয়া গিয়েছে বলে সূত্রের খবর।

গত বুধবার প্রথম জেরা করা হয়েছিল অনুপকে। তবে, বক্তব্যে অসঙ্গতি থাকায় শনিবারেও সিজিও কমপ্লেক্সে ডাকা হয় তাঁকে। সঞ্জয়ের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বেশ কিছু বিষয়ের তিনি উত্তর দেননি বলে তদন্তকারীদের দাবি।
আজই সংশোধনাগারে পলিগ্রাফ টেস্ট আরজি কর কাণ্ডে ধৃত সঞ্জয়ের

ভরসা সঞ্জীবে
পানিহাটি শ্মশান থেকে দেওয়া আরজি করের চিকিৎসকের ঘাট সার্টিফিকেটে সই রয়েছে প্রতিবেশী সঞ্জীব মুখোপাধ্যায়ের। বাবা-মার পরিবর্তে সেখানে কেন প্রতিবেশীর সই রয়েছে, তা নিয়ে এ দিন প্রশ্ন উঠতেই মুখ খোলেন চিকিৎসক তরুণীর বাবা। তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন সঞ্জীবের উপর ভরসা রেখে যেটুকু কাজ করার করেছি। ও আমার মেয়েকে নিজের মেয়ের মতোই মনে করত। ওই দিন আমাদের সম্মতি নিয়েই যা করার করেছে।’

সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘নির্যাতিতার বাবা-ই আমাকে ফোন করে আরজি করে ডেকেছিলেন। অভিযোগ লিপিবদ্ধ করা থেকে শুরু করে ঘাট সার্টিফিকেটে সই, যা যা প্রাথমিক কাজ ছিল সবটাই বাবা মায়ের সম্মতি নিয়ে একজন প্রতিবেশী হিসেবে করেছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version